Selected Poems
নির্বাচিত কবিতা
——- জাকারিয়া চৌধুরী
১.
আমরা দিগন্ত ভুলে পথ খুঁজি
তাই লক্ষ্যে পৌঁছুতে পারি না
২.
গরীবের নরকের ভয় নেই
কেন না নরক তাদের
এ জীবন
ধনী নরকের ভয়ে ভীত
কারণ তাদের স্বর্গ
এ জীবন
৩.
আমার চোখে আলো না থাকলে
কে তোমাকে অন্ধকারে পথ দেখাতো
তোমার চোখে আলো না থাকলে
কে আমাকে অন্ধকারে পথ দেখাবে
৪.
আনন্দ দেওয়ার মাঝে যে আনন্দ
যে তা দেয়নি
সে তা বুঝবে না
প্রেমের মধ্যে যে পৃথিবী
সেই পৃথিবীকে
যে প্রেমিক নয় সে বুঝবে না
আমি প্রেমে পড়ি অন্যের রূপ দেখে
আয়নায় নিজের রূপ দেখে নয়
৫.
আমি খোদাকে ভুলে
মানুষ পেতে চাই না
আবার মানুষ ভুলে
থাকতে চাই না খোদায় মগ্ন
খোদাও তা চান না
৬.
আমি চাই না
কেউ পায়ে পড়–ক
আমি চাই না
কেউ মাথায় চড়–ক
আমি চাই
সবাই বুকে বুক মিলাক
৭.
তুমি কি শুনতে পাও আমার গান
তুমি শোন কি শোন না
আমি গেয়েই যাবো
আমার গান তোমার জন্যে
৮.
মৃত্যুতে সব দুঃখের
আবসান হয় না
মৃত্যু মুক্তি নয়
মুক্তির ছাড়পত্র পেতে হবে জীবনেই
তবেই হবে সব দুঃখের সব বেদনার অবসান
৯.
আমার সমাধি যেন হয়
আমার চিন্তার সমাধির আগে
আমার সমাধি যেন হয়
আমার বিবেকের মৃত্যুর আগে
আমি শেষ নিঃশ্বাস নিতে চাই
মনে কোনও পাপবোধ না নিয়ে
বিবেকের বিচারে হয়তো
ভুল করতে পারি
কিন্তু বিবেককে ফাঁকি দিয়ে
কিছু করিনি কখনও
এতেই মনে করি
আমার পরিত্রাণ
আমার নির্ভানা
আমার স্যালভেশন
১০.
নিজে অন্যায় করেছি বলে
ন্যায়ের পক্ষে থাকবো না
দেখতে কুৎসিত বলে কি
সৌন্দর্য্য পিয়াসী হবো না
১১.
কাকে কি দিয়েছি
তা মনে থাকে না
কিন্তু কাকে কি
দিতে পারিনি
তা আমার সর্বক্ষণ
মনে থাকে
১২.
ভালোবাসার নিক্তিতে
জীবনকে দেখতে গিয়ে
ঠকেছি অনেক
তবু হারিনি
সাধারণ মানুষ
১৩.
তোমাদের শরীরে এ কিসের গন্ধ
এ গন্ধ কোনও
ফুল ফল বা ফসলের নয়
প্রাণবন্ত মানুষেরও না
তোমাদের ঘুমন্ত চোখে শুধু দুঃস্বপ্নের আতঙ্ক
আর জাগ্রত চোখেও নেই
ভাব বা ভাষা
তোমাদের কান আছে
তাতে পর্দ্দা নেই
জিহ্বায় নেই লালিত্য
মেদ ও মাংস আছে
কিন্তু তাতে নেই চামড়ার আবরণ
তোমাদের আছে স্বাচ্ছন্দ্য নেই সুখ
আর যদি ধরে নিই
স্বাচ্ছন্দই সুখ
তাহলে কি দাঁত মানেই হাসি নয়
হাসি মানেই আনন্দ
অশ্রু মানেই কান্না
তোমাদের সাধ অনেক
কিন্তু আছে কি সাধনা
তোমাদের বানানো-পাঠানো
হাতিয়ার আমাদের হাতে
কিন্তু কলমের কালচার বড় কম
তোমাদের সমাজে
তাই উপকারের চেয়ে
অপকার বেশী
তোমাদেরও আল্লাহ্ আছেন
কিন্তু কানে নেই তার আজান
তোমাদের বুকে নেই ঈমান
তাই নেই জীবনে কোনও আর্শীবাদ
তোমাদের গায়ে কিংবা আবাসনে
ফুল ফল ফসলের নয়
যেন পচনের গন্ধ
তোমাদের ঘামের গন্ধ
কোনও শ্রমিক বা প্রেমিকের নয়
যেন হার্টের রুগীর
তোমাদের হাতে বাতি আছে
কিন্তু পথে আলো নেই
মুখে শ্লোগান আছে বুকে স্নেহ নেই
ভূত আছে ভবিষ্যৎ নেই
গলায় স্বর আছে কন্ঠে সুর নেই
কথায় যাদু আছে মনে আন্তরিকতা নেই
তোমাদের মতামত আছে
মতবাদও আছে
কিন্তু আছে কি জীবন-জিজ্ঞাসা
বিদ্যা আছে তো শিক্ষা নেই
শিক্ষা আছে তো জ্ঞান নেই
বিজ্ঞান আছে তো দর্শন নেই
দিক আছে তো লক্ষ্য নেই
তোমাদের অবয়বে
পশুর আদিম সৌন্দর্যও নেই
শিশু তাই জন্মলগ্নে কেঁদে ওঠে
দানব সমাজের দোরগোড়ায় এসে
স্রষ্টার প্রতি তোমাদের না আছে ভালবাসা
না আছে ভয়
স্রষ্টা যদি না হোন জীবন-ডালি
মৃত্যুর পরোয়ানা তো নিশ্চয়
আর যদি হই আমরা সবাই মৃত্যুঞ্জয়ী
তাহলে আমরা কি
নিজেরাই নিজেদের বধ করবো না
এই দানবের দোজখ থেকে
অব্যাহতি পাওয়ার জন্যে
আর যদি মরতে গিয়েও
মরতে না পারি
মারতে গিয়েও না পারি মারতে
তাহলে কি
সইতে হবে না অনন্তকাল ধরে
এই দানবীয় দুর্ভোগ
মানুষ নামের শয়তানের মাঝে
এরই নাম কি নরক নয়
আমরা তোমাদের মত
আসাধারণ হওয়ার প্রতিযোগিতায়
অশান্তি ডেকে আনতে চাই না
কেউকেটা হতে গিয়ে
কুঁড়াতে চাই না ক্লেদ ও ক্লান্তি
আমরা সাধারণ হয়ে বাঁচতে চাই
আমরা সাধারণ মনের শান্তি চাই
আমরা মামুলি লোকের চোখের ঘুম চাই
তাই বুঝি আমাদের চোখে ঘুম আছে
গায়ে আছে ঘাম প্রেমিক ও শ্রমিকের
আছে গন্ধ জীবনের
তোমাদের বিকারগ্রস্ত বিলাসের বিলাপে
আমরা আজ বিভ্রান্ত
তোমাদের লাগামহীন উচ্চভিলাষের চাকার নীচে
আমরা সাধারণ মানুষ আজ ঔষ্ঠাগত প্রাণ
আমরা তোমাদের মত জীবনযুদ্ধে অবতীর্ণ নই
আমরা জীবনের স্থাপত্যে ব্রতী
যুদ্ধ আমাদের ধর্ম নয়
যুদ্ধ তোমাদের কর্ম
তোমাদের যুদ্ধে আমরা বলি হই
আমরা সাধারন মানুষ
আমাদেরকে কি তোমরা শান্তি দেবে না
১৪.
আমার জন্য কেউ পথ চেয়ে থাকে না
থাকে ওত পেতে
আমার দুয়ারে কোনও স্নেহস্নিগ্ধ পা পড়ে না
ঘুম ভেঙ্গে-ভেঙ্গে যায়
ভারি পায়ের সদম্ভ সমাগমে
আমার মাথায় স্নেহ ভরে হাত রাখে না কেউ
মানুষের হাতের স্পর্শে আঁতকে উঠি
এই বুঝি ধরলো চেপে টুটি
রাতের মানুষ আপন মানুষ
হাঁটিহাঁটি পা পা করে
গায়ের আগোছালো চাদরটা
টেনে দিচ্ছে এই আমেজে
ঘুমের গায়ে আশ্বস্ত মনে
এলিয়ে পড়ার সুন্দর সৌভাগ্য আমার হয়নি
হয়নি প্রেয়সীর গায়ের চুম্বক স্পর্শে
দেহমন তোলপাড়
চুলের ভিতর তার আন্দোলিত
আঙ্গুলের ঢেউয়ে ভেসে-ভেসে
বেড়াবার পাইনি আস্বাদন
ছোট বেলা আবছা অন্ধকারে
মনে হতো ভূত ওত পেতে আছে
এখন বড় হয়ে অন্ধকারে
গা ছমছম করে
মানুষের জঙ্গলে
আর দিনের আলোয় দেখি
আদমের বংশ তো নয়
যেন দলে-দলে দানবের আনাগোনা
আপন সে কোথায় আজ
সবাই কি আমরা আপন-হারা
না এ আমার মনে বিকার
তবে কার ব্যাধি আমাকে আজ বধ করছে
করছে বিবাগী
ঘুম গেছে ছুটে
স্বপ্ন গেছে টুটে
মাথা হয়ে আছে ভার
আমাদের ভারে
চাঁদও ওঠে
মেঘও আকাশে খেলা করে
রং ছড়ায়
পাখি ডালে-ডালে গায় গান
নদী চপল পায়ে
ঝুমুরের তালে-তালে
এগিয়ে চলে সাগর সঙ্গমে
ফুল ফোটে বনে বাগানে
প্রজাপতি হয় প্রমত্ত
আর আমরা শুধু প্রমোদে মত্ত
আমোদ নেই আমাদের জীবনে
আতœহারার আর্তনাদে
বিদীর্ণ এই পৃথিবীতে
বিকারগ্রস্থ জীবনের গরল ধারণ করছি
আর আস্ফালন করে ভুলে থাকছি
আলিঙ্গনের পৃথিবীকে
আদর আমরা ভূলে গেছি
সমাদরের সমারোহে
কাগজের ফুলের মালার ঘ্রাণ
আমাদের নাকের রন্ধ্রে-রন্ধ্রে
সোহাগ ভরে কে এক গুচ্ছ রজনীগন্ধা দেবে
কে যায় তার সন্ধানে
১৫.
পরাজয় যদি মেনে নিতে না পারেন
তা হলে মাঠে নামবেন না
মাঠ তাহলে কলুষিত হবে
দর্শকেরা ছি ছি করবে
মারামারি করবে
মনের ক্ষোভে
১৬.
আমি কি করে আমি হই
তুমি যদি তুমি না হও
১৭.
মানুষের মনে খোদার সাড়া নেই
তাই তো আমরা এত অসহায়
এত একাকী
১৮.
মানুষের কাছে খোদার দূত হওয়ার চেয়ে
খোদার কাছে মানুষের দূত হওয়াই
আমার কাম্য
১৯.
জীবনের ক্ষুদ্র পরিসরে
জীবনকে সেই দেখতে পায়
যে সৃষ্টি
এবং সেই হেতু
স্রষ্টাতে
বিশ্বাস করে
২০.
আসর ছেড়ে যেতে
আমার বড় খারাপ লাগে
তবু যেতে হয়
বৃহত্তর তাগিদে
২১.
নয় মাসের মুক্তিযুদ্ধের সময়
আমরা জাতিস্বার্থে বিশ্বাসী ছিলাম
তারপর
রাজনৈতিক ভুলের কারণে
আমরা ক্রমশই ব্যক্তিস্বার্থে
বিশ্বাসী হয়ে
পড়লাম
আমরা এখন
একটা ব্যক্তিসর্বস্ব
অন্ধ জাতি
জাতি হিসাবে
এইভাবে টিকে থাকা
যাবে না
সত্তাকে বৃহত্তর প্রেক্ষিতে না দেখলে
ব্যক্তি দিশেহারা তরীর মতো
অনিশ্চয়তায়
ভুগবে
২২.
আমি কি মৃত্যুর চিন্তা করে
জীবনকে ভুলে যাবো
না
আমি কি জীবনের চিন্তা করে
মৃত্যুকে ভুলে যাবো
না
জীবন-মৃত্যুর উর্ধ্বে
আমার ঠাঁই
২৩.
ধর্ম জাতিগত নয়
ধর্ম জন্মগত
জাতি ধর্মগত নয়
কিন্তু জন্মগত
আবার উভয়ই
পরিবেশগত
ধর্মের পরিবর্দ্ধন হয় পরিবেশের কারণে
জাতিরও পরিবর্তন আসে পারিপার্শ্বিকতায়
এক গোত্রের রক্তের ধারা
শত বাধা সত্ত্বেও
প্রবাহিত হয়
অন্য গোত্রের ধমণীতে
গোত্র বর্ণ জাতি ধর্ম
কত ভাগেই না আমরা
মানব জাতিকে বিভক্ত করেছি
তা ছাড়া আরও কত
সংঘাতের উপাদান রয়েছে
আমাদের এই মানব সমাজে
ব্যক্তি হিংসা
ব্যক্তি সংহাত
নারী পরুষে দ্বন্দ্ব
পার্থক্যকে মেনে নিয়ে
তার মধ্যে বৈচিত্রের আনন্দ কি
খঁজে পেতে
পারি না
দ্বন্দ্বকে সুন্দর মনে মেনে নিয়ে কি
আমরা সংহার এড়াতে পারি না
পারি না কি আমরা
শত পার্থক্য সত্ত্বেও
ভালবাসার বন্ধনে
প্রেমের আলিঙ্গনে
একত্রিত হতে
শুধু মসজিদে
গীর্জায় মন্দিরে
মঠে মাদ্রাসায় নয়
বনে জঙ্গলে
পাখীর পাখনায়
সমুদ্রের ঢেউয়ে
পর্বতের বরফাচ্ছাদিত চূড়ায়-চূড়ায়
প্রজাপতির ডানায়-ডানায়
তারায়-তারায়
মেঘে-মেঘে
নদীর কলতানে
ঝর্নার ঝংকারে
শিশুর মুখের হাসিতে
প্রিয়ার আলিঙ্গনে
পাখীর কলগুঞ্জনে
যা কিছু বারে-বারে বিভিন্ন রূপে দেখি
তাই কি আপনার আমার সবার জন্য
স্রষ্টার মহিমামন্ডিত নয়
তবে কেন এত দ্বন্দ্ব কিসের সংঘাত
পার্থক্য মানেই দ্বন্দ্ব হবে কেন
প্রজাপতি যদি সবই একই রঙের
একই নকশার হত
প্রজাপতির কোনও
আকর্ষণ থাকতো কি
২৪.
মন দিয়ে মন পাওয়া
এখন আর
যায় না
পয়সা দিয়ে
প্রেম কিনতে হয়
নাম কিনতে হয়
এমনকি সম্মানও
২৫.
তোমাদের হিসাবে
আমি অনেক নীচে নেমে গেছি
আমি তো বরাবর নীচেই ছিলাম
উপরে যাওয়ার প্রতিযোগিতায়
আমি কখনও ছিলাম না
এখনও নেই
কখনও থাকবোও না
২৬.
যে মানুষের মনের শ্রদ্ধা
অর্জন করতে পারে না
সে খোদার ভালবাসাও
আশা করতে
পারে না
২৭.
পৃথিবীতে মঙ্গল নেমে আসুক
জীবন সুখী ও সুন্দর হউক
এই তো হওয়া উচিত আমাদের কামনা
জাতি-ভেদ
ধর্ম-ভেদ
শ্রেনী-ভেদ
বর্ণ-ভেদ
আমরা ভেদাভেদির জালে
আটকা পড়ে আছি
মানুষ তাই মুক্ত হতে
পারছে না
২৮.
আনন্দ দেওয়ার মধ্যেই
আমার আনন্দ
আনন্দ দেওয়ার ক্ষমতা
যেদিন থাকবে না
সেদিন আমিও আর
থাকতে চাইবো না
২৯.
বলি বলি করে
অনেক কথাই
বলা হয় না
কাকে বলবো
শোনার মত কান থাকলে তো
বলি বলি করে
অনেক কথাই
মনে চাপা পড়ে থাকে
হয় পর্বত হয় আগ্নেয়গিরি
আগ্নেয়গিরি যখন
আর থাকতে না পেরে
ফেটে পড়ে
তখন হয় বিষোদগার
বলা তবু আমার হয় না হবে না
আমি তখন
ভেসে-ভেসে মরি
আমারই লাভায়
৩০.
মানুষ যদি তার কর্মকান্ড
সুষ্ঠুভাবে চালাতে না পারে
খোদাকে
দোষারোপ করে লাভ কি
মানুষের হাতে মানুষ
কত মরে
আর খোদার হাতে কতো
সেই হিসাব করলে
মানুষের ব্রুটেলিটি
সহজেই ধরা পড়ে
৩১.
মনে প্রেম না থাকলে
বা প্রেমের পরিবেশ না থাকলে
প্রেম করতে ইচ্ছে
করে না
বাকি সব কিছুই তো
কমার্স
কমার্শিয়াল কোনও কিছুই
আমার মনকে
তেমন নাড়া দেয় না
যেমন দেয়
মন ও দেহের
একাতœতা
যেমন দেয় মানুষে-মানুষে
সমঝোতা
প্রকৃতি ও মানুষে কোলাকুলি
খোদা ও তার
সৃষ্টির মধ্যে হারমনি
৩২.
আমার দেহে পচন ধরুক
কিন্তু আমার মনে পচন
ধরতে দেবো না
মনে পচন ধরার আগে
আমি মরে যেতে চাই
৩৩.
তোমাদের বিচারই শেষ
বিচার নয়
আমারও মানুষ হিসাবে
বিচারজ্ঞান আছে
কিন্তু
তারচেয়ে বড় বিচার আছে
খোদার হাতে
যার কাছে
সময়-সীমা নেই
আছে বিচারের বিন্তীর্ণ পরিধি
আমাদের সময়-জ্ঞানে
যা অনুধাবন করা যায় না
৩৪.
খোদা সব কিছু
আমরা শুধু নিমিত্ত
খোদার কাছে এই আমার নালিশ
আমরা কেন এত
নিমিত্ত
আমরা নিমিত্ত নই
আমরা বিশিষ্ট
‘আশরাফুল মাখলুকাত’
সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব
আল্লাহ্র বিশেষ
আদরের
৩৫.
মন আমার নবীন রেখেছি
এই আমার অপরাধ
৩৬.
জীবন তো নয়
যেন একটা কাঠগড়া
শুধু অভিযুক্ত হয়েই থাকলাম
অভিযোগ করার অধিকারটুকুও
পেলাম না
৩৭.
কার বিচার কে করবে
আমরা সবাই তো
আমাদের মধ্যে
ভেদাভেদের কারণে
একভাবে না একভাবে দোষী
৩৮.
মানুষের সাথে যতই মিশছি
ততই অনুরাগের চেয়ে
বিরাগ বেড়ে চলেছে
তা হলে কি মানুষ থেকে
আলাদা হয়ে গিয়ে
বিবাগী হয়ে যাবো
বিবাগী হতে গিয়েও
হতে পারলাম না
যদি মানুষ পীর মনে করে
এই ভয়ে
৩৯.
(বাবা জনাব এহিয়া খান চৌধুরীর মৃত্যু,
শনিবার, ১৮ জানুয়ারী, ১৯৮৫)
আর একজন
মানুষের মৃত্যু
এমন গুরুত্বপূর্ণ কিছু নয়
আর দশজনের কাছে
আমার কাছে
একটা মনের মৃত্যু
একটা প্রাণের মৃত্যু
একটা প্রেরণার মৃত্যু
একটা দর্শনের মৃত্যু
একটা শুভেচ্ছার মৃত্যু
একটা স্নেহের মৃত্যু
একটা ভালবাসার মৃত্যু
এ মৃত্যু আমারই মৃত্যু
আংশিকভাবে
বাকি অংশ আমি
যে আমি এখনও
আছি বেঁচে কি স্বার্থে জানি না
৪০.
কোনও উপকার করতে না পারি
কারও কোনও অপকার আমি কামনা করি না
৪১.
সব প্রেমই আমার কাছে সমতুল্য
অতীত বর্তমান বা ভবিষ্যৎ
কেন না আমি একজন প্রেমিক
৪২.
বেশ্যাপাড়া সেও ভাল
মুর্দ্দা পাড়ার চেয়ে
মৃত সতীর চেয়ে
জীবন্ত বেশ্যা কি
বেশী কাম্য নয়
শুস্ক হাসির সালামের চেয়ে
ভেজা ঠোঁটের চুম্বন কি
বেশী কাম্য নয়
৪৩.
মান চাই না
চাই শ্রদ্ধা
মালা চাই না
চাই ফুল বাগান
চাই আনন্দ
চাই ভালবাসা
চাই সোহাগ
চাই ভ্রাতৃত্ববোধ
চাই সমতা
চাই সামঞ্জস্য
চাই সৌন্দর্য্য
চাই সহনশীলতা
চাই সহানুভূতি
চাই সম্প্রীতি
চাই তো আরও কত কিছু
কিন্তু পাই কি
পাব কি
এই জীবনে
৪৪.
দুঃস্বপ্ন তারাই দেখে যারা স্বাপ্নিক নয়
যারা অতি-বাস্তব
যারা স্বাপ্নিক
তারা ঘুমায় সুন্দর স্বপ্ন দেখে
যারা অতি-বাস্তব
তারা ঘুমায় না দুঃস্বপ্নের ভয়ে
৪৫.
সব স্বপ্ন বাস্তব হবে
তেমন তো কোনও কথা নেই
কিছু-কিছু স্বপ্নও যদি বাস্তব হয়
মনে করবো জীবন আমার ধন্য
৪৬.
তোমরা সবাই
আমার কাছ থেকে
কিছু না কিছু
আদায় করে
নিতে চাও
কিন্তু আমি
যখন প্রার্থনাও করি
কারও কাছ থেকে
কিছু পাই না
এ যেন গুড়ের বাটিতে পিপড়ের ভীড়
আমি যদি গুড় না হতাম
তাহলে
৪৭.
উপকারের সুযোগ
নেয়ার চাইতে
উপকার না করাই ভাল
৪৮.
পাখীর গানের মাঝে
প্রজাপতির
ডানার সাথে
কিংবা সমুদ্র তরঙ্গে
কিংবা তারায় তারায়
সুদূরের সন্ধানে
খুঁজে মরি যাকে
সে তো আমি নই
কে সে তবে
তাকেই তো আমি খুঁজি
৪৯.
সৃষ্টি যেমন স্রষ্টা ছাড়া হয় না
স্রষ্টাও সৃষ্টি ছাড়া অর্থহীন
আমাদের যেমন
স্রষ্টার দরকার
স্রষ্টার তেমনি দরকার
আমাদেরকে
৫০.
সব নেশাই যদি কেটে যাবে
তবে বাঁচবো কি নিয়ে
৫১.
চাইতে গিয়ে যা পোলাম না
তার চেয়ে দিতে গিয়ে যা
দিতে পারলাম না
সেই দুঃখ অনেক বড়
৫২.
আমি পথে নেমে
মানুষ পেয়েছি
ঘরে থাকতে গিয়ে
নয়
৫৩.
জীবন কি একটা
যোগান্তক না
বিয়োগান্ত নাটক
আমি বলি
যোগান্তক
স্রষ্টার যোগসূত্রে
৫৪.
ত্বরিত মুনাফার লোভে
পন্য সম্ভার নয়
আমি পরিবেশ বিক্রি করতে চাই
৫৫.
বিজ্ঞান মানেই জ্ঞান নয়
জ্ঞানের পরিধি
বিজ্ঞানের চেয়ে অনেক বড়
অনেক ব্যাপক
জ্ঞান উপলদ্ধি
বিজ্ঞানী দেখে মাইক্র্যাস্কোপ দিয়ে
টেলিস্কোপ দিয়ে
কিন্তু তার বাইরেও
অস্তিত্ব আছে অবস্থান আছে
যা মানুষের ধরা ছোঁয়ার বাইরে
সেই অস্তিত্ব
সেই অবস্থান
মনের বিস্তার দিয়ে
উপলদ্ধি করে নিতে হয়
বিজ্ঞানের নিক্তি দিয়ে নয়
৫৬.
শত শত সুন্দরীর
মুখের হাসির চেয়ে
একটা শিশুর মুখের হাসি
অনেক আকর্ষণীয়
একটি শিশুর কন্ঠের কান্না
শত সুন্দরীর কান্নার চেয়ে
অনেক বেশী বেদনাদায়ক
৫৭.
জীবনটা একটা স্রোতধারা
কোনও এক ঘাটে
নোঙ্গর করে না থেকে
স্রোতের নেশায়
অন্য ঘাটেও
পাড়ি জমানের দরকার
তাই নয় কি
৫৮.
জীবনের যাত্রী হিসাবে
আমি কান্ডারী হওয়ার ধৃষ্ঠতা রাখি না
কিন্তু নাবিক হওয়ার সুযোগও কি
আমার জীবনে
আসবে না
৫৯.
আমি কখনও নাবিক
কখনও জেলে
কখনও কবি
কখনও মেঘ
কখনও পাখী
কখনও পিতা
কখনও মাতা
আমি সব বেশে
আমি স্রষ্টার
আমি সৃষ্টির
আমি আমার
আমি তোমাদের আমি সবার
৬০.
মানুষে মানুষে পার্থক্য থাকতে পারে
কিন্তু ভেদাভেদ থাকবে কেন
যদি আমরা একে অন্যকে
আপন করে নিই
৬১.
সব কথাই যদি লিখে ফেলি
তা হলে বলবো কি
সব কথাই যদি বলে ফেলি
তাহলে লিখবো কি
একই গান
একই তান
একই ছন্দ
একই গন্ধ
একই বাদ্য
একই যন্ত্র নিয়ে যদি
মশ্গুল থাকি
নতুন গান
নতুন কথা
নতুন ছন্দ
নতুন গন্ধ
পাব কি করে
তাইতো আমি
চির নতুন
চির সবুজ
৬২.
নদী পার হতে গিয়ে
যখন সাতরাচ্ছি
তখন ভেবেছি তীরে কখন পৌঁছুবো
তীরে যখন পৌঁছুলাম
তখন ভাবনা হলো
তীরে আমার জন্য
কি আছে
৬৩.
যে খোদা প্রশ্নকে ভয় করে
সেই খোদায়
আমি বিশ্বাস করি না
যে খোদা সব প্রশ্নের
উত্তর দিতে পারে
আমি সেই খোদায়
বিশ্বাস করি
মানুষ সব প্রশ্নের
উত্তর দিতে পারে না
তাইতো সে মানুষ
৬৪.
সৃষ্টি ও স্রষ্টা
একই সুরে বাঁধা
একই গাথায় গাঁথা
একই আলিঙ্গনে আবদ্ধ
একই আবেশে আবিষ্ট
একই তরঙ্গে তরঙ্গায়িত
একই ছন্দ্বে ছন্দিত
একই ভাষায় বিকশিত
আমরা এক ও অভিন্ন
সিম্ফনির বিভিন্ন মিউজিক হ্যান্ড
মিউজিক ওয়ান্ড
স্রষ্টার হাতে
৬৫.
আকন্ঠ পান করো না
পেট পুরে খেয়ো না
তা হলে স্বাস্থ্য ঠিক থাকবে
আমরা হা-ভাতের মত খাই
মাতাল না হওয়া পর্যন্ত পান করি
যার কোনটাই
ঠিক নয়
যা কিছু করবে পরিমিতভাবে করবে
ধন দৌলত ক্ষমতা
মাত্রার অধিক যা কিছু হবে
বদ হজম হবেই
একদিন না একদিন
৬৬.
স্রষ্টাকে আমরা নির্বাসন দিয়েছি
দুঃখের জগতে
স্রষ্টা কি আনন্দের
সাথী হতে পারে না
যে আনন্দে স্রষ্টা নেই
সেই আনন্দে আমি নেই
যে স্রষ্টা আনন্দের অংশীদার নয়
সেই স্রষ্টায় আমি নেই
সুখ দুঃখ দুই মিলিয়েই
আমার জীবন
দুঃখে যেমন
সুখেও তেমন
স্রষ্টা আমার প্রধান সাথী
সৃষ্টির আয়োজনে
৬৭.
মুখ যদি কথা বলে মনের হয়ে
মন ঢাকবো কি দিয়ে
মন যদি হয় সুন্দর
ঢাকারই বা দরকার কি
মন যদি হয় নোংরা
মুখ কি মনের কথা কখনও বলতে পারে
৬৮.
ভালবাসা পাবার আশায় ভালবাসা যায়
কিন্তু ভালবাসা না পেলে ভালবাসা দেওয়া যায় না
তোমার ভালবাসা বেঁচে থাকলে
আমার ভালবাসাও বেঁচে থাকবে
তোমার না থাকলে আমারও থাকবে না
৬৯.
অকারণে হিংসা করা যায়
অন্যের যা আছে
আমার তা নেই বলে
এই নিয়েই আমাদের জীবনে
কত না হা হুতাশ
৭০.
আমি বাঁচতে চাই না
যদি অনুধাবন না করতে পারি
অনুভূতি আছে বলেই অনুধাবন
অনুভূতি যদি মরে যায়
আমি বেঁচে থাকবো কি করতে
আমি যে বেঁচে আছি
তাই-ই বা অনুভব করবো কি করে
অনুভূতির মৃত্যুই কি তাহলে আমার মৃত্যু নয়
৭১.
আমি বেঁচে আছি অন্যেরা আছে বলে
অন্যেরা বেঁচে থাকলে
আমারও আকাঙ্খা হবে বেঁচে থাকার
৭২.
নিজকে বিলীন করে দেওয়ার আনন্দ
যদি শিখতে পারো
আনন্দ কোনও দিনই তোমাকে ত্যাগ করবে না
শত দুঃখ সত্ত্বেও
৭৩.
আমাকে যদি তোমরা দাওয়াত দাও
মন থেকে দিও
দামে ভারি কার্ড দিয়ে নয়
৭৪.
আমাকে আকর্ষণ করে যদি
আসক্তই না করতে পারলে
এই আকর্ষণের দাম কি
৭৫.
আমার পৃথিবীকে আমি ভালবাসি
তা তোমার বলে
৭৬.
আমি কারুর কারুর চেয়ে ভাল
অন্য কেউ আমার চেয়েও
৭৭.
নিজের শূন্যতা পূরণ করতে হলে
অন্যের শূন্যতা পূরণ করতে হবে
আমি অন্যের শূন্যতা পূরণ না করলে
অন্যে আমার শূন্যতা পূরণ করবে কেন
৭৮.
আমি শুধু তাকেই ভালবাসতে পারি
যাকে নিয়ে চিন্তা করি
আমার চিন্তায় না থাকলে
ভালবাসায় থাকবে কি করে
ভালবাসা যখন থাকবে না
চিন্তায়ও আসবে না
চিন্তায় না থাকলে
মনেও থাকবে না
৭৯.
আমি কি চিন্তা করবো তা
আমিই চিন্তা করি
যদি চিন্তা করতে চাই টাকা
তাহলেই টাকা চিন্তা করছি
যদি চিন্তা করতে চাই ভালবাসা
তাহলে ভালবাসাই চিন্তা করছি
তাহলে কি আমার চিন্তা
কিংবা দুঃশ্চিন্তা আমি নিজেই নই
৮০.
মানুষই মানুষের সবচেয়ে বড় শক্র
এই ব্যাপারে
খোদাকে
এমনকি
শয়তানকেও
দোষারোপ করে
লাভ নেই
নিজেদেরকে সংশোধন করতে হবে
আল্লাহ্ ও শয়তানকে স্মরণ করে
ন্যায়-অন্যায়
বিচার-অবিচার
সততা-শঠতা
বিচার করে
৮১.
আল্লাহ্কে ডাকলে
আল্লাহ্ সাড়া দেয়
মানুষকে ডাকলে
মানুষ সাড়া দেয় না
৮২.
মিছিল সভা শোভাযাত্রা মুক্তিযুদ্ধ
অন্যায়ের বিরুদ্ধে
সব সংগ্রামেই তো ছিলাম
এক না এক সময়ে
ভয় হয়
সব যুদ্ধেই হয়তো হেরে গেলাম
ন্যায়ের পক্ষে থাকতে গিয়ে
তবু জীবন আমাকে
হাতছানি দেয়
শিশুর হাসি ও কান্নায়
প্রেয়সীর আলিঙ্গনে
পাখীর গানে
ফুল ফল ও ফসলের গন্ধে
প্রজাপতি ও পাখীর ডানার ঝাপটায়
পূর্ণিমার চাঁদে
আকাশের মিটিমিটি তারায়
সমুদ্রের ফেনিল বিশালতায়
পর্বতের ধ্যানমগ্ন গাম্ভীর্যে
ঝর্ণার ছন্দে
সঙ্গীতের তরঙ্গে
জীবনের রোমান্স
আমি প্রত্যাখ্যান
করি কি করে
জীবনটা আমার জন্য
এক অভিযান
তাই বুঝি মনে আমার
এতো রোমান্স
আশা ভঙ্গ সত্ত্বেও
৮৩.
আমার জীবন
কাহিনী না হয়ে
কি শান্তির হতে
পারে না
গাঁথা না হয়ে
কি মা-দাদী-নানীর
সেলাই করা কাঁথা
হতে পারে না
পারে না পেতে একটু স্থিতি
একটু শান্তি
প্রাণ যে আমার হাঁপিয়ে উঠছে
আর বুঝি পারি না
কাহিনীর ও গাথার
বস্তাবন্দী হয়ে থাকতে
৮৪.
আমি কি জীবনে হারলাম
না জিতলাম
কে জানে
আমি নিজেই তো
জানি না
শুধু জানি বিবেককে বিক্রি করে
কিছুই করিনি
যদি মনে করি
হেরেই গেছি জীবনের যুদ্ধে
তবু তো মরতে পারবো বিবেকের
জয়টিকা পড়ে
শুধু জীবনকে নয়
মৃত্যুকেও জয় করতে হবে
বিবেকের জয়টিকা পড়েই
৮৫.
আমি থাকবো
তোমাদের মাঝেই থাকবো
যাবো না কোনও দূর দূরান্তরে
স্বর্গ-সুখের সন্ধানে
পালিয়ে যাবো না
কখনও কোথাও
পালিয়ে যাওয়া আমার স্বভাব নয়
এগিয়ে যাওয়া যে আমার নেশা
৮৬.
খোদা ঈশ্বর ভগবান অলমাইটি
যে নামেই আমরা
তাকে ডাকি না কেন
সে এক ও অবিভাজ্য
আমরা কেন তাহলে এত খন্ড-বিখন্ড
ধর্মের সাথে কর্মের
কোনও সমম্বয় নেই বলে
আমরা স্লিপ-ওয়াক করছি
আমরা আর জেগে নেই
খোদাকে আমরা বন্দী করে রেখেছি মন্দিরে মসজিদে
রেখেছি গির্জায় মাজারে মক্তবে
রেখেছি বাড়ীর চিলেকোঠায়
কিন্তু নেই মনের অন্দর মহলে
৮৭.
আমরা সব আজ আতœহারা
তাই আমরা আপন হারা
আমরা সব হারার পৃথিবীতে
জিততে চাচ্ছি ছলা কলা কৌশল
চুরি বাটপারি
শঠতা ভন্ডামী
যেমন করে হোক না কেন
আমরা নিজেদের জালে
নিজেরাই আটকা পড়েছি
ব্যক্তিগতভাবে দোষ দেব আর কাকে
মানুষ যদি আতœঘাতী হয়
খোদাকে ভুলে
আদর্শকে ভুলে
খোদার বা আদর্শবাদীর
তাতে দোষ কোথায়
৮৮.
দেওয়ার চেয়ে যদি
পাওয়ার তাগিদ হয় বড়
যারা কেড়ে নেয়
বা শুষে নেয়
টিকবে নাকি তারা শেষ বিচারে
তা ইতিহাসেরই হোক
বা আল্লারই হোক
যারা চেটে খাচ্ছে
তারা মানুষ নামের
আঁস্তাকুড়ের কুকুর
আঁস্তাকুড়ের কাক ও শুকর
কুকুর বা কাক বা শুকর তো
ততটা কামড়া কামড়ি করে না
যতটা মানুষ করে
মেরে ফেলে না
একে অন্যকে
স্বার্থের সংঘাত থেকে
মানুষ নাকি আশরাফুল মাখলুকাত!
হাসি পায় এই কথা শুনে
লজ্জায় মাথা হেঁট হয়ে আসে যে
আমিও মানুষ
৮৯.
সময় হয় তো সুযোগ হয় না
সুযোগ হয় তো সময় হয় না
না হলো সময়ের সদব্যবহার
না হলো সুযোগের
সময় গুনছি
কখন দুয়ের সমম্বয় হবে
৯০.
কি স্বপ্ন দেখলাম
কি হলো
কি হবে
৯১.
জীবনটা একটা ধ্বংসস্তূপের উপর দাঁড়িয়ে
না হলো অন্যের সেবা
না হলো নিজের
কিসের আশায় তবে দিন গুনছি
শেষ বিচারের অপেক্ষায়
৯২.
জীবজগতে একমাত্র মানুষই হাসতে জানে
অথচ সেই হাসিই আজ
মানব জীবন থেকে
নির্বাসিত
একমাত্র হাসি যা আছে তা স্বার্থের
৯৩.
আমি সেখানে যেখানে আমার মনের বিরাজ
মন নেই তো কিসের অস্তিত্ব
৯৪.
পশু পাখী জীব জন্তু
কীটপতঙ্গ তো নিজেদের মধ্যে
মানুষের মতো যুদ্ধে লিপ্ত নয়
মানুষের যুদ্ধ তো
শুধু বন্দুক দিয়ে নয়
নানাভাবে
মিথ্যা প্রতারণা
ভন্ডামী ভাওতাবাজি
ছল-চাতুরী
এসব কিছুই মানুষের
হাতিয়ার
যখন ছল-চাতুরীতে
মানুষ হেরে যায়
তখন অস্ত্র ধরে
প্রতিপক্ষকে পরাভুত
করা দিয়ে কথা
সে অন্যায়ভাবেই হোক
বা অসৎ পথেই হোক
কাকে মেরে কাকে ঠকিয়ে বা টেক্কা দিয়ে
কে বড় হবে
ধন খ্যাতি বা ক্ষমতার সোনার হরিণে চড়ে
আমরা সেই প্রতিযোগিতায়
হাঁপিয়ে ওঠা প্রাণী
৯৫.
সময় থাকতে না বুঝলে
যখন বুঝবে তখন আর
সময় থাকবে না
৯৬.
মানুষের মৃত্যু হয়
জীবনের নয়
ব্যক্তির মৃত্যু হয়
সমষ্টির নয়
৯৭.
কিসের দুনিয়ায় আছি
কার দুনিয়ায়
ছেলেমেয়েদের দুনিয়ায়
ভবিষ্যৎ গড়ে তুলবো বলে
তাদের জন্য কি কোনও
ভবিষ্যৎ আছে সুন্দর অর্থে
শান্তির অর্থে
৯৮.
যা পেলাম তা অপরিপূর্ণ
যা আছে তা দৈন্য
যা হবে তা ভয়াবহ
৯৯.
আজকের পৃথিবীতে
উস্কিয়ে দেওয়ার লোকের
অভাব নেই
মিলিয়ে দেওয়ার লোকের
বড় অভাব
যেখানে নেই মিল
সেখানেই মিছিল
মিছিল থেকে
মুর্দ্দা লাশ হয়ে
বক্তৃতা-বিবৃতি মারফত
ঘোষিত হলো শহীদ বলে
এখন পালা
এক নতুন দিবসের
স্মৃতি চারণের জন্য
বক্তৃতা বিবৃতির জন্য
শহীদের লিষ্টি
দীর্ঘ করার জন্য
পার্টির ইমেজ বাড়ানোর জন্য
পত্র-পত্রিকা মারফত
স্ব-ঘোষিত শহীদী দরজার দখল
কার বেশী
সেই হিসাবে না গিয়ে আমরা কি
জীবিতের ও জীবনের
রাজনীতি
করতে পারি না
১০০.
আমি যেমন রোমাঞ্চিত হই
বৃষ্টির ঝিরিঝিরি শব্দে
হই পাখীর কল-কাকলিতে
হই ঝর্ণার ছন্দে
হই আকাশ জোড়া অগুনতি তারার
হাতছানিতে
চাঁদের রূপালী আলোয়
সাগর বক্ষে ঢেউয়ের তালে তালে
পর্বতমালার সৌম্য মূর্তিতে
নদীর গীতায়িত স্রোতধারায়
তেমনি রোমাঞ্চিত হই
নারী দেহের উষ্ণতায়
যদি থাকে সেই দেহে কোনও উষ্ণতা
থাকে প্রাণের স্পন্দন
থাকে আতœার বিচ্ছুরণ
১০১.
এত হাহাকার
এত হাহুতাশ
এত আর্তনাদ
তার মধ্যে রচি
কেমনে আমার সুখের নীড়
শান্তির নীড়
সুখ এখন আর সুখ নয়
কেবল সুরসুরি
শান্তি এখন ক্লেদ ও ক্লান্তিতে ভরা
এক অমাবশ্যার চাঁদ
১০২.
কোথায় যেন এক বড় অভাব
শুধু খাওয়া থাকার বা
ভাত কাপড়ের নয়
আরও কিছুর
কোথায় সেই দাতা গোষ্ঠী
মিটায় এই অভাব
১০৩.
অশেষকে পাওয়ার জন্য
আমি নিঃশ্বেষ হতে চাই
অজানাকে জানার জন্য
আমি পন্ডিত নয়
তাপস হতে চাই
১০৪.
ভালবাসা চাই
কিন্তু ভালবাসা কি পাই
১০৫.
অপরূপকে ভাল না বাসলে
রূপচর্চা হবে কি করে
শুধু রূপের মোহে
১০৬.
বার্লীন প্রাচীর
তুমি আজ মানুষের ঢেউয়ে
ভেঙ্গে গিয়ে
সম্প্রসারণের হাত
সুগম করেছ
দিয়েছ
আমাদেরকে নতুন দিক নির্দেশনা
নতুন প্রেরণা
তোমাকে আমরা স্মরণ করি
শুধু তুমি নও
পৃথিবীর যত দেওয়াল যতখানে আছে
আছে যত ভেজাল
যত জঞ্জাল
যত বিভেদ
তা নিক্ষিপ্ত হবে হয়তো
একদিন ইতিহাসের ডাষ্টবিনে
প্রাচীর শুধু
দেশে বিদেশেই নয়
জাতিতে জাতিতে নয়
বর্ণে বর্ণে নয়
প্রাচীর আমাদের ঘিরে রেখেছে
সর্বত্র সবখানে
এ প্রাচীর আমাদের ভাঙ্গতে হবে
নতুন উদ্দীপনায়
মন্দির বা মসজিদ বা গির্জা
সে প্রাচীরে আমরা আবদ্ধ থাকতে
চাই না আর
থাকতে চাই না
বাধা নিষেধের কারাগারে
আমরা চাই
শিশুর মুখের হাসি
প্রিয়ার বুকের প্রেম
মায়ের বুকের ভালবাসা
বাবার মনের আর্শিবাদ
চাই মানুষের কাঁধে কাঁধ মেলাতে
চাই ফুলের গন্ধ
চাই ফলের আস্বাদন
চাই মনের বিকিরণ
শত রং-এ শত স্রোতে
অসীমের সন্ধানে
১০৭.
মন যখন ধেয়ে চলে
আগুনতি নক্ষত্রপুঞ্জে
রাশি রাশি তারার প্রাণ প্রদীপে
নেচে ওঠে
ঝর্ণার ঝঙ্কারে
পুলকিত হয় সাগর সঙ্গমে
গীতায়িত হয় পাখীর কলরবে
অঙ্কুরিত হয় ফুলের কলিতে
মন যখন সৌম্য মূর্ত্তি গিরিশ্রেণী
যখন প্রজাপতির রংছটা
প্রিয়ার বুকের স্পন্দন
শিশুর মুখের হাসি
মন যখন বৈশাখীর কালো মেঘ
ঝড় ও ঝঞ্জা
ঢেউয়ে ঢেউয়ে
তান্ডব নৃত্য
মন যখন অনেক কথা
অনেক ব্যথা
অনেক আশা
অনেক নিরাশা
তখন আর কিসের ভয়
ভয় এখন মানুষকে মানুষের
মন যখন কোনও কিংবদন্তীর নায়ক
কিংবা পরীর দেশের রাণী
নতুবা দানবের খপ্পরে
রাজকুমার ও রাজকুমারী নয়
মন যখন
এত দ্বিধা এত দ্বন্দ্ব
এত হিংসা এত ঈর্ষা
মন যখন
আর প্রেয়সীর
বুকের মধু মিলন নয়
নয় শিশুর মুখের হাসি
নয় অনাদি ও অনন্তের পিয়াসী
তখন কেন হারাবো না বিশ্বাস
মানুষে মানুষে
১০৮.
আমি কি চাই
তোমাকে চাই
কে সে তুমি
তুমি কখনও শান্ত
কখনও ক্ষুদ্ধ
কখনও রুদ্র
কখনও কান্না
কখনও হাসি
কখনও
প্রিয়ার বুকের প্রেম
কখনও
মায়ের বুকের ভালবাসা
বাবার মনের আর্শিবাদ
তুমি কি আগ্নেয়গিরি
না পাখীর কাকলি
না স্রোতের শতধারা
হাজার ফুলের প্রষ্ফুটন
আগুনতি তারার হাতছানি
না সঙ্গীতের ভূবনের সম্রাজ্ঞী
যে ভূবনে
ডিসকর্ডের স্থান নেই
আছে শুধু হারমনি
১০৯.
আমরা প্রতারিত
তাই আমরা বিতাড়িত বিবস্ত্র
নতুন জীবনের সন্ধানে
নতুন জীবন
সে কি জীবন
দ্ধিধা সংশয়
হিংসা বিদ্ধেষ
হীনমন্যতা
হিমালয় প্রমাণ আতœম্ভরিতা
হিমালয়ের সৌম্যতা হারিয়ে
আমরা এক সৃষ্টি ছাড়া
বখাটের দল
১১০.
এ জীবন
আর সয়না
কোনও নতুন জীবন
সুন্দর জীবন
শান্তির জীবনের
আশায় আশায়
১১১.
আমার জীবনের ফুল না ফুটতেই
কি ঝরে যাবে
কতই তো দেবার ছিলো আমার
শত ব্যাথা
শত বেদনায়
অজস্র ধারায়
ছিলো দেবার
না ফোটা ফুলের ঘ্রাণ ও প্রাণ
অজানার সন্ধান
যে কলি ফোটে না
সে কি প্রস্ফুটিত ফুলের
গৌরব বাড়ায় না
নীরবে নিভৃতে
আপন ক্রন্দনে
যে তারা চোখে পড়ে না
সে কি তারা নয়
মনের হাসি কি সর্বদা
বিকশিত হয় মুখের রেখায়
সব কান্না কি অশ্রু হয়ে ঝরে
সব দেখা দেখা নয়
সব জানা জানা নয়
সব অনুধাবন জ্ঞান নয়
সব জ্ঞান দর্শন নয়
সব মিলে যা
তাই প্রক্রিয়া সৃষ্টি ও স্রষ্টার
১১২.
আর ভাল লাগে না
এই প্রেমহীন পৃথিবী
ভাল লাগে না এর কোলাহল
যেখানে মৃত্যুই মুক্তি
বেঁচে থাকা এক বোঝা
যার ভারে আমি ক্লান্ত
এ যদি আস্ফালনের পৃথিবী না হয়ে
হতো আলিঙ্গন ও আস্বাদনের পৃথিবী
উপলদ্ধির পৃথিবী
আদরের পৃথিবী
তা হলে
কি হতো
এত হাতাহাতি
এত হতাহত
জীবন কি লালিত হতে পারে না
স্পন্দিত হতে পারে না স্নেহের লাবণ্যে
গান গাঁথা কবিতা আর
কত কি ছন্দে
চিত্রিত হতে
পারে না
ফুল ফল ফসলের বর্ণে ও গন্ধে
সৌরভিত হতে
জীবন সে কি বর
না অভিশাপ
না পাগলের প্রলাপ
১১৩.
জীবন দেখি চোখের জলে
মাঝে মধ্যে সিক্ত হলেও ধ্বনিত
হয়ে ওঠে
সৃষ্টির সুর ধারায়
উদ্বিপ্ত হয়
শাশ্বত আতœার উত্তাপে
১১৪.
ভালবাসাকে আমি বড় ভয় করি
ভালবেসে আর ঠকতে চাই না বলে
১১৫.
না পাওয়ার বেদনার চেয়ে
দিতে না পারার বেদনা
অনেক বড়
১১৬.
মৃত্যু পথ যাত্রী মানুষ মনে করে
জীবনটাই সব
এর আগে পরে কিছু নেই
এতই কি ক্ষুদ্র জীবনের পরিসর
এতই কি অন্ধ সৃষ্টির প্রক্রিয়া
১১৭.
যার আদি আছে তার অন্ত আছে
যার অন্ত আছে
তার অন্তিম আছে
আদি ও অন্ত
দুই মেরুর মাঝে
জীবনের চলাচল
জীবনের উঠাপরা
এত শুধু খেয়া পারাপার
আমরা কি পার হতে পারি না নদী
নৌকা না ডুবিয়ে
কলহের কারণে
১১৮.
আমি নিজের চিন্তা
যত না করি
তার চেয়ে বেশী করি
অন্যের চিন্তা
নিজের কাজ যত না করি
তার বেশী করি অন্যের কাজ
তাই আমি আজ র্সবহারা
১১৯.
প্রত্যেকটা লোক বাড়ী ফিরুক
নিরাপদে
প্রত্যেকটা লোক ঘুমাক
শান্তিতে
প্রত্যেকটা লোক কাজে যাক
নতুন উদ্যমে
মানুষে মানুষে সম্পর্ক হোক
আন্তরিক
মানুষ জাগুক
মানুষ সজাগ হোক
বৃহত্তর সত্তার আলিঙ্গন ও স্পন্দনে
১২০.
এত হাসি
এত করতালি
এত স্পটলাইট
এত ক্যামেরা
এত মাইক
এত মটরবাইক
কত সালাম
কত স্যালিউট
কত কি ধুমধাম
তারপর সার্কাসের তাবু গুটিয়ে প্রস্থান
নিরানন্দ মনে
সার্কাস এত ক্ষণস্থায়ী বলে
১২১.
মনের দুর্ভিক্ষ আজ
ঘরে ঘরে
দেশে দেশে
এই দুর্ভিক্ষের জন্য
কি তহবিল আছে
ওয়ার্ল্ড ব্যাংক, ইউ এস এইড
আই এম এফ কিংবা ইউ এন ও তে
তার শত শত ডালপালা
গজানো ভূবনে
কে মেটাবে মনের শূণ্যতা
কে মেটাবে মনের জ্বালা
কে আনবে বারিধারা
মনের মরুভূমিতে
১২২.
ব্যক্তি-স্বার্থ ভিত্তিক
প্রতিযোগিতায় না নেমে
পারি না কি আমরা
এগুতে একে অন্যকে
বাহু-বন্ধনে জড়িয়ে
এই জ্ঞানবিজ্ঞানের যুগে
প্রতিযোগিতা হবে
খেলোয়াড় সুলভ
হারি জিতি নাহি লাজ
নট ‘ডু অর ডাই’
১২৩.
দিন যায় দিন আসে
রাত আসে সূর্য্যরে অন্তর্ধানে
অন্ধকারের অবগুন্ঠনে
কোটি কোটি তারকার
আলোক-বার্তা নিয়ে
চাঁদের লালিমায়
আমাদের দেহ-মন আপ্লুত করে
তারা সে কই আজ
চাঁদ সে তো
সোডিয়াম লাইটের
তাড়নায় নির্বাসিত
গান ও কবিতা
সে তো এখন
প্রচার শিল্পের পন্য
বিত্তশালী বাড়ীর অলংকার
১২৪.
মানুষ আর কথা বলে না
শুধু বিলাপ করে
১২৫.
যে ফুল নিভৃতে ফুটে
অজান্তে ঝরে যায়
সেকি ফুল হয়ে
প্রস্ফূটিত হওয়ার আনন্দ পায় না
মানুষের টেবিলে
ফুলদানির সমাদর পায়নি বলে
কে চায় বন্দী হতে
পর্সিলিনের কারাগারে
খোলা আকাশ ও মুক্ত বাতাস
পরিত্যাগ করে
সব ফুলই যদি বাজারজাত হয়ে
ফুলদানির শোভা বাড়ায়
বন জঙ্গল ও বাগানের
শোভা ও সৌরভ
বাঁচিয়ে রাখবে কে
১২৬.
মানব প্রেমের মাঝারে
যদি না পাই ঠাঁই
পাবো কি ঠাঁই
মাজারে মাজারে
মন্দিরে মসজিদে
১২৭.
জীবনের স্রোতধারায়
কেউ যায় সাগর সঙ্গমে
কেউ জেগে ওঠে
চর-উপচর হয়ে
ইতিহাসের গতিধারায়
প্রতিবন্ধক রূপে
১২৮.
আমার আর কে আছে
তুমি ছাড়া
তোমার আর কে আছে
আমি ছাড়া
১২৯.
তোমাকে ছাড়া আমি বিবাগী
আমাকে ছাড়া তুমি
১৩০.
শুধু খোদার প্রেমে
মশগুল হয়ে থাকলে
জীবনের চাকা বন্ধ হয়ে যাবে
আবার ঈশ্বর চিন্তা ভুলে গেলে
জীবনের রথও যাবে থেমে
১৩১.
মৃত্যুতে আমার আর
দুঃখ হয় না
দুঃখ হয় তাদের জন্যে
যারা বেঁচে আছে
বিকলাঙ্গ এই জীবনে
১৩২.
মানুষকে দেখলাম
জানলাম
চিনলাম
ভালোও বাসলাম
এখন মানুষ থেকে
বিদায় নিতে পারলে বাঁচি
১৩৩.
ভালো চিন্তা যতই ভীড় করে মনে
ঘুম ততই আসে স্বপ্নের আবেশে
আর খারাপ চিন্তা যতই ভীড় করে
ঘুম ততই দূরে সরে যায়
দুঃস্বপ্নের আতংকে
১৩৪.
আমি মৃত লাশের কারণে
চিন্তিত নই
আমি ভীত
জীবিত লাশের ভয়ে
মৃত লাশের তো ঠিকানা রয়েছে
জীবিত লাশের ঠিকানা কোথায়
১৩৫.
ধন্য সে মৃত্যুতে
যে ধন্য জীবনে
যে ধন্য সে তো ফুরিয়ে যায় না
জীবনের অবসানে
১৩৬.
মানুষ সৃষ্টির স্রোতে ভাসমান তরী
১৩৭.
জীবনের বৃত্ত ততই ছোট
যত ছোট মন
আবার ততই বড় যত বড় মন
১৩৮.
দৌড়ের প্রতিযোগিতায় কে আগে গেলো
সেটা বড় কথা নয়
দৌড়ের শেষে কে আগে এলো
সেটাই আসল কথা
১৩৯.
যে নিদ্রায় সুন্দর স্বপ্নে ভাসি
সেই নিদ্রা চাই
যে নিদ্রায় দুঃস্বপ্নের ভয়
সে তো জেগে থাকা
১৪০.
অনেক পথ হাঁটার পর যে বিশ্রাম
সেই বিশ্রামের স্বাদ সেই পায়
যে হেঁটেছে বহু পথ
১৪১.
সব চেয়ে বড় অশান্তি
ঘরের অশান্তি
তারপর পাড়ার
তারপর দেশের
তারপর পৃথিবীর
ঘরে যখন শান্তি নেই
পাড়ায়
দেশে
পৃথিবীতে
শান্তি আসবে কোন পথে
১৪২.
বিয়ে না করলে মনে হয়
বিয়ে করলে ভালো হতো
বিয়ে করলে মনে হয়
বিয়ে না করলে ভালো হতো
১৪৩.
যদি লোকের ভালোবাসা নিয়ে
মরতে পারি
মনে করবো স্বর্গে যাচ্ছি
আর যদি ঘৃণা কুড়িয়ে
মরতে হয়
মনে করবো নরকে যাচ্ছি
১৪৪.
আমি সেই শিল্পী নই যে
তোমার সৌন্দর্য
আমার চিত্রে
রঙে আর রেখায়
ধরে রাখবো
আমি সেই কবি নই যে
তোমার গুনগান
ছন্দে-গন্ধে ভাষার ব্যঞ্জনায়
ফুটিয়ে তুলবো
আমি নই কোনও দার্শনিক যে
জ্ঞানের আলোয়
তোমাকে দেখবো
আমি নিছক এক প্রেমিক
প্রেমের মমতায়
তোমাকে পাওয়ার আশায় দিন গুনি
১৪৫.
আমি যখন তোমার প্রেমে মগ্ন থাকি
বিশ্ব জুড়ে তখন নামে
পাথর নীরবতা
আমাকে তুমি সরিয়ে দিলে
তোমাকে আমি জড়িয়ে রাখি
বাড়িয়ে আমার তমাল-বাহু
কে-ই বা জানে তখন তুমি
চিরঞ্জীবী আলিঙ্গনে
আমার বুকে খোঁজো কি না
প্রেমের অমরতা
১৪৬.
তোমার সত্তা দিয়ে তৈরী হলো
আমার আতœা
আমার আতœা দিয়ে তৈরী হলো
তোমার সত্তা
১৪৭.
তোমার বাতাসে
যখন ধরেছি পাল
ডুবালে ডুববো
ভাসালে ভাসবো
ভাবনা কিসের
আমি যে তোমার
প্রেমের দোলায়
ভাসমান এক নির্ভীক নাবিক
১৪৮.
তোমার মেঘে
আমার চোখে
বৃষ্টি ঝরে
তোমার চোখে
আমার মেঘে
বৃষ্টি ঝরে কি
১৪৯.
ওরা বলে
আমি নেশা করি
আমি নেশা করি
তোমাকে পাবার আশায়
তোমাকে পাবার জন্যে
আমি বিষ পানেও ভীত নই
তোমাকে দেখার জন্যে
যদি অন্ধ হতে হয়
অন্ধত্বে আমার ভয় কি
তুমি যে আমার
আঁধারের আলো
১৫০.
আমি মৃত্যুর ভয়ে ভীত নই
আমি জীবনের ভয়ে শংকিত
শয়তানের সাম্রাজ্যে যখন বাস
তখন ভয় কি মরণে
১৫১.
আমি ভালোবাসি
ভালোবাসা মনে আছে বলে
কিন্তু কাকে কি কারণে ভালোবাসি
তা কি জানা যায়
যায় না
১৫২.
অশ্রুর সরোবরে ফোটা
জীবনের এই পদ্ম কি
ফুলদানীতে রাখবো
না ঝরে যেতে দেবো
নিজের ইচ্ছায়
১৫৩.
মুক্তি সেদিনই আসবে
যে দিন মানুষ
মোহমুক্ত হবে
১৫৪.
জন্মলগ্নে কাঁদতে কাঁদতে
এসেছিলাম
বিদায় বেলাতেও কি
কেঁদে কেঁদে যেতে হবে
কাঁদতে কাঁদতে এসেছিলাম
হাসিমুখে যেতে চাই
১৫৫.
মানুষকে যত বড় মনের
মনে করতাম
মানুষ আসলে
তত বড় মনের নয়
মানুষের চেয়ে বড় মনের
সেই সত্তাকে খুঁজে বেড়াচ্ছি
যার ঠিকানা আমার নেই জানা
ভয় হয়
যদি তার নাগাল না পাই
১৫৬.
আমি তোমার মাঝে
বেঁচে থাকবো
আমার মাঝে তুমি
কেউ কি আছে আমি ছাড়া
তোমাকে এত ভালোবাসার
কেউ কি আছে তুমি ছাড়া
আমাকে এত ভালোবাসার
আর ভালোবাসা যদি
না থাকে মনে
তুমি আমি বেঁচে থাকবো কি নিয়ে
কে কার প্রয়োজনে?
১৫৭.
আমি যতই
প্রেমের ভিখারী হই না কেন
পূজারী শুধু তোমারই
১৫৮.
আমি স্বর্গ রচনা করি
তোমাকে নিয়ে
একা কি আর
স্বর্গ রচনা করা যায়?
যায় না
১৫৯.
আমি তোমার প্রেমে ব্যাকুল
তুমি কি
আকুল আমার প্রেমে
কে জানে
১৬০.
স্রষ্টা থেকে সরে গিয়ে
আমরা কেউ ধর্মের গুহায়
অবস্থান করছি
কেউ বা নিয়েছি অবস্থান
শয়তানের স্বর্গে
১৬১.
ফুলদানীর ফুল হয়ে বাঁচতে চাই না আমি
বাগানের ফুল হয়ে ঝরে যেতে চাই
১৬২.
বিছানায় জন্মেছিলাম
বিছানায় মরতে চাই
আছে কি আর জীবনে
সেই নিশ্চয়তা
১৬৩.
ওরা মাটি থেকে পৃথিবীটাকে দেখে
আমি দেখি আকাশ থেকে
মাটিতে নেই আমার কোনও ঠিকানা
আমার ঠিকানা আকাশে
১৬৪.
টাকার ভুবনে বাস করে
প্রেমের ভুবন কি
রচনা করা যাবে
যাবে না
সেদিন দূরে নয়
যখন খাওয়া দু®প্রাপ্য হয়ে যাবে
টাকার প্রাচুর্য সত্ত্বেও
এমন কি বাতাসও
সুস্থ শ্বাস ফেলার
জায়গা থাকবে না এই পৃথিবীতে
পন্যের ছড়াছড়িতে
জীবনের ধান্ধায়
টাকা উপার্জন
না টাকার ধান্ধায়
জীবন যাপন
কোন পথে যাবো আমরা
এখন এটাই প্রশ্ন
১৬৫.
কেউ যদি আমাকে বলে
মৃত্যুর আগে
তোমার শেষ ইচ্ছা কি
আমার উত্তর হবে
আমি যেন
একটা প্রতিবাদের মিছিলে
যোগ দিতে গিয়ে
মরতে পারি
১৬৬.
এত সুন্দর
তোমার চোখ
নাক
কান
চুল
গ্রীবা
ঠোঁট
তবে কেন তুমি এত অসুন্দর
১৬৭.
জীবনে অনেক জ্যোৎস্না
অনেক হাঁছনাহেনা
পার হয়ে এসেছি আমি
সেই জ্যোৎস্না
সেই হাঁছনাহেনা
এখন কোথায়
হারিয়ে গেছে
কোন আলোর অন্ধকারে
১৬৮.
আমার কোনও প্রার্থনাই টিকলো না
না মানুষের হয়ে
আল্লার কাছে
না আল্লার হয়ে
মানুষের কাছে
১৬৯.
ঠাঁই হবে কি একটু
তোমার দুয়ারে
কত পথ-ঘাট
নদী-বন্দর
সাগর আকাশ
শত জনপদ
মানুষের ভীড় পেরিয়ে
কোথাও যখন
ঠাঁই মেলেনি
এই অবেলায়
ঠাঁই দেবে কি
একটু তোমার দুয়ারে
১৭০.
কল্পনা যেখানে থমকে দাঁড়ায়
আমি তোমাকে খুঁজি সেখানে
বুদ্ধি যখন হার মানে
তখন নোঙ্গর ফেলি তোমার পোতাশ্রয়ে
১৭১.
তুমি আছ বলেই
আমি আছি
আমি আছি বলেই
তুমি আছো
তুমি থাকবে বলেই
আমিও থাকবো
আমি থাকবো বলেই
তুমিও থাকবে
১৭২.
তোমার চিন্তা করতে গিয়ে
নিজের চিন্তা করি
না নিজের চিন্তা করতে গিয়ে
তোমার চিন্তা করি
কে জানে
চিন্তা যে করি
সেই আমার গৌরব
মানব রূপে
১৭৩.
আমি আল্লার সঙ্গী হয়ে
দোজখে বাস করতে রাজী
কিন্তু শয়তানের সঙ্গী হয়ে
বেহেস্তেও যেতে রাজি নই
কেন না আল্লার অবস্থানে
দোজখ বেহেস্তে রূপান্তরিত হবে
আর শয়তানের সহবাসে
বেহেস্ত হবে দোজখ
১৭৪.
মানুষ মনের নয়
দেহের সমাজে বাস করে
জীবন যদি হতো মন
দেহের সেবায়
মনের মৃত্যু হতো না
১৭৫.
কে সে তুমি যাকে খুঁজি বারে বারে
আকাশে বাতাসে
লক্ষ কোটি নক্ষত্ররাজিতে
ফুলের শোভায়
নদীর তরঙ্গ
পাখির কাকলী আর
প্রেমিকার আলিঙ্গনে
কে সে তুমি যাকে দেখি মনের আলোয়
চোখের আলোয়
খুঁজে পাই না
১৭৬.
ভালোবাসার ফসল যদি
মানুষ হয়ে থাকে
তবে কেন জীবনে
ভালোবাসার এত অভাব
১৭৭.
তুমি কতদূরে বা কত কাছে
কে বা জানে
জানি শুধু
তুমি আছো
তাই আমি আছি
এই আমার আনন্দ
১৭৮.
হৃদয় যখন পড়ে থাকে তোমার চরণে
তখন কী আর
প্রয়োজন হয় প্রণামের
১৭৯.
আমার কেন জানি মনে হয়
তুমি ঘিরে আছো আমাকে
আমি যখন ঘিরে আছি
সারাক্ষণ তোমাকে
তুমি কেন ঘিরে থাকবে না আমাকে
১৮০.
জন্মেছিলাম
আমি এক মানব সন্তান
মরবো মুসলমান রূপে
মানুষ পরিচয়ে
কি বেঁচে থাকা বা মরা যায় না
যে শিশু জন্ম নিলো
ভিন্ন ধর্মে
না চাইতে
তার বেলায়
কি শাস্তি
আমার ধর্ম মতে
১৮১.
বারে বারে যাকে
ভালোবেসেছি
সে তো তুমি
ভিন্ন ভিন্ন ধারায়
চোখ মেলেই
প্রথম আলোতে তোমাকে দেখেছি
দেখেছি তোমাকে
ঘুমন্ত চোখে
সৃষ্টির গহবরে
দেখেছি তোমায়
জেগে উঠে
উড়ন্ত পাখির ডানায়
পড়ন্ত বেলায়
আলোর মেলায়
তোমাকে পেয়েছি
সহস্র সুরে
তালে লয়ে
গানে ও গাঁথায়
রূদ্র রূপে
ঝড় ঝঞ্ঝায়
কাঁপন প্লাবন
কত কি
ধ্বংশ যজ্ঞে
তুমি এক তুমি অনেক
১৮২.
তোমাকে ধারণ করি আমার মনের গহনে
ভয় করে নয়
ভালোবেসে
এই তুমি কি সেই তুমি নও
যাকে ভালোবাসি বারে বারে
১৮৩.
পৃথিবীব্যাপী এখন
ধনী হবার প্রতিযোগিতা
সৎ ও সুন্দর হবার
প্রতিযোগিতা
কখন শুরু হবে
আর বাঁচবে পৃথিবী
১৮৪.
জীবনে কাদা
মাড়াইনি কখনও
তাই ভয়ে থাকি
কখন নর্দমায় পড়ি
১৮৫.
শয়তানের স্বর্গের চেয়ে
স্রষ্টার নরকে
বাস করা নিরাপদ
১৮৬.
আমি সেই গায়ক
যার কোনও শ্রোতা নেই
আমি সেই বাদক
যার কোনও বাজনা নেই
আমি সেই প্রেমিক
যার কোনও প্রেমিকা নেই
আমি সেই বন্ধু
যার কোনও বান্ধব নেই
শুধু তুমি ছাড়া
১৮৭.
আমি দেখেছি তোমাকে সহস্র মুখে
শত কোটি অবয়বে
নাই বা হলো দেখা মানুষের প্রিয়া
মানসের প্রিয়ার
পেয়েছি যখন সন্ধান
১৮৮.
বিচার তো পেলাম না জীবনে
এখন শেষবিচারের আশায়-আশায়
আছি চেয়ে মৃত্যুর মুখপানে
১৮৯.
মন-পাখি উড়ে চলে
দূর-দূরান্তে
দেহ আমার পড়ে থাকে
পথে ও প্রান্তরে
১৯০.
কত কাছে
তবু কত দূরে
কত দূরে
তবু কত কাছে
কত কাছের তবু দূরের
কত দূরের তবু কাছের
১৯১.
জীবনে সব আশাই যদি পূরণ হবে
তবে বেঁচে থাকবো কী করতে
আমার শেষ আশা জীবনকে ঘিরে নয়
আমার শেষ আশা মৃত্যুকে নিয়ে
অজানাকে ঘিরে
১৯২.
অনেক পথ হেঁটে এসেছি জীবনে
পথে-পথে এত বিপদ বিপর্যয়
এত ক্লেদ ও ক্লান্তি
তবু কেন পথ-হাঁটার নেশা
ফুরায় না
১৯৩.
বিদায়ের বেদনা সইতে না পারলে
নতুনের আগমন হবে কি করে
১৯৪.
জীবনের অপরাহ্নে দাঁড়িয়ে
কেন যেন সবকিছু
নবীন লাগছে
এ কি আমার মতিভ্রম
১৯৫.
জীবন ও মৃত্যুর
যোগসূত্র যে
সে হলো আমার
ঈশ্বর
১৯৬.
জীবনে সব কলি না ফুটুক
একটি ফুল হলেও চাই
জীবনের ফুল
আমার টবে
১৯৭.
জীবনকে ভালোবাসা যদি
পাপ হয়ে থাকে
আমি সেই পাপে পাপিষ্ঠ
আর কোনও পাপে নয়
১৯৮.
কোন গাঁথা নয়
মানুষের গায়ের
কাঁথা হয়ে
আমি থাকতে চাই
১৯৯.
আমি কোন্ রূপে
তোমাকে ভালোবাসি
সে আমার ব্যাপার
ভালোবাসি সেই তো
বড় কথা
২০০.
আমার পা মাটিতে
কিন্তু মন আকাশে
২০১.
আমার জীবনের প্রথম প্রেরণা
ক্ষুদিরাম
সে ফাঁসিকাষ্ঠে ঝুলে মারা গেছে
আমি জীবনের
ফাঁসিকাষ্ঠে ঝুলে আছি
মরিনি এখনও
২০২.
আমি মানপত্র দিয়ে বরণে বিশ্বাসী না
আমি মন দিয়ে গ্রহণে বিশ্বাসী
২০৩.
শৈশবে-কৈশোরে
গাছে-গাছে
ডালে-ডালে
মাঠে-মাঠে
ফুলে-ফুলে
ফলে-ফলে
যে ঘ্রাণ
যে রং মনে নিয়ে
যৌবনে পদার্পণ করি
সেই রং
সেই ঘ্রাণ
সেই প্রাণ
মনে নিয়ে
মৃত্যুকে বরণ করলে
মৃত্যু হবে মহিয়ান
২০৪.
ফুলদানিতে স্থান হবে
এই আশায় ফুল ফোটে না
ফুল ফোটে
আপন সৌরভে আপন গৌরবে
২০৫.
আমি স্রষ্টাকে
যতো না দুঃখের মুহূর্তে মনে করি
তার চেয়ে
বোধ করি আনন্দের মুহূর্তে
২০৬.
আমি তোমাকে যতোই দেখি
ভিন্ন-ভিন্ন রূপে
সুন্দর থেকে সুন্দরতর অবয়বে
ততোই আমি তোমার নেশায় মগ্ন হই
তোমার কৃপার অপেক্ষায় থাকি
আমাকে আর
কত নেশাগ্রস্থ হতে হবে
তোমার অপেক্ষায়
২০৭.
আজীবন যাকে খুঁজেছি
সে কি তুমি
সে কি তুমি
সে কি তুমি
সারাজীবন যাকে চেয়েছি
সে কি তুমি
সে কি তুমি
সে কি তুমি
যার স্বপ্নে গভীর নিদ্রায় রাত কাটে
সে কি তুমি
সে কি তুমি
সে কি তুমি
যার আলিঙ্গন আশায় মনে শিহরণ জাগে
সে কি তুমি
সে কি তুমি
সে কি তুমি
যার সৌন্দর্য্যে বিমোহিত হয়ে
মন হয় আমার উথাল-পাথাল
সে কি তুমি
সে কি তুমি
সে কি তুমি
কে সে তুমি
কি নামে ডাকি তোমায়
২০৮.
গল্পের আমার শেষ নেই
তাই গল্প আমি লিখি না
২০৯.
জীবনের পরীক্ষায় পাশ না করতে পারি
তোমার পরীক্ষায় পাশ করবো
সেই আশায় বেঁচে আছি
এবং মরবোও একই আশায়
২১০.
আমি জীবনকে চাটতে চাই না
আমি জীবনকে চাখতে চাই
আমি ফুল ছিড়তে চাই না
আমি ফুল শুকতে চাই
খাওয়ার তৃপ্তি পেতে চাই
পরিমিত খেতে চাই
২১১.
আমার মৃত্যু যেন হয়
ঘুমের ঘোরে
স্বপ্নের আবেশে
কাউকে জাগালাম না
নিজেও জাগলাম না
২১২.
সুরার পাত্র ভেঙ্গে গেলে
নতুন পাত্রে করবো পান
প্রেমের সুরা নিঃশেষ হলে
জীবন হবে অবসান
২১৩.
দুশ্চিন্তা করতে চাইলে
অনেক দুশ্চিন্তাই করতে পারতাম
তবু সুখ-স্বপ্ন দেখে
জীবনকে ভরিয়ে রাখি
২১৪.
আমি স্্রষ্টা ভুলে
সৃষ্টি চাই না
সৃষ্টি ভুলে
স্্রষ্টাকে পাই না
২১৫.
আমার পছন্দ
মানুষের ভিড় নয়
মানুষের মেলামেশা
২১৬.
মনের সীমানায়
বাস করি
দেহের সীমানায় নয়
২১৭.
আমার বাসা সেইখানে
যেখানে আমি থাকি
আমার বাড়ি সেইখানে
যেখানে আছে ভালোবাসা
২১৮.
দুঃখের অন্ধকারে আনন্দকে দেখা উচিত
আনন্দের আলোকে দুঃখকে
তখন ভারসাম্য থাকবে জীবনে
২১৯.
আমি আমার জন্যে নয়
তোমার জন্যে
তোমার মাঝে
তোমার স্বপ্নে
বিভোর হয়ে বেঁচে আছি
স্বপ্ন যখন ভেঙে যাবে
ঘুম যখন কেটে যাবে নতুন প্রভাতে
আমি আবার উদয় হবো
নতুন স্বপ্নের আয়োজনে
কেন না তুমি যে চির নতুন
তুমি আমার বিস্ময়
২২০.
তোমার ভুবনে
তোমার যতনে
তোমার প্রেমে
তোমার ধ্যানে
তোমার গানে
তোমার ঘ্রাণে
বিমুগ্ধ আমি এক বৈরাগী
২২১.
আপন যখন পর হয়
এর চেয়ে পর আর কিছু হয় না
পর যখন আপন হয়
এর চেয়ে আপন আর কিছু হয় না
২২২.
হাঁটু জলে সাঁতার কাটা যায় না
যেমন যায় না অগভীর মনে
২২৩.
মৃত্যুবিহীন যেমন জীবন হতে পারে না
জীবনবিহীন মৃত্যুও তেমনি হতে পারে না
২২৪.
আতœার সাথে আতœার যেখানে
যোগাযোগ নেই
সেখানে শুধু জীবনের সংলাপ দিয়ে
জীবনকে কি ধরে রাখা যাবে
২২৫.
নারীর প্রধান পরিচয়
মা হিসাবে
প্রেমিক না বৈজ্ঞানিক
না শিল্পী না পেশাদার
সেই পরিচয় পরের কথা
যেহেতু শিশু মনে মায়ের প্রভাব
ভবিষ্যতের আগমনী বার্তা
২২৬.
মনের দরজা দিয়ে
ঢুকেছে শয়তান
তাই আল্লাহ্ বিদায় নিয়েছেন
জানালা দিয়ে
২২৭.
দিনান্তে নিশান্তে
শুধু খুঁজে বেড়াই তোমাকে
তুমি এখন বিসর্জিত নদীগর্ভে
ডুবুরি হয়ে তোমাকে উদ্ধার করবো
এই আমার ব্রত
২২৮.
আমাকে আর দূরে ঠেলে দিও না
তাহলে কিন্তু আমাকে আর পাবে না
তখন কেঁদো না
২২৯.
জীবনটা আমার জন্য
একটা নাটক বা উপন্যাস নয়
জীবনটা আমার জন্য
এক মহাকাব্য
২৩০.
যুবকেরা শক্ত হাতে
যা কিছু বানাবার সুযোগ পাবে
তারা তাই বানাবে
যদি বোমা বানানো রেওয়াজ হয়
তারা তাই বানাবে
তারা তাই ফাটাবে
আমাদের ইঙ্গিতে
আমাদেরই ইন্ধনে
২৩১.
আমি জানি
আমি দোষী
কিন্তু অন্যান্যের চেয়ে
কম দোষী
এটাই আমার সন্তুষ্টি
২৩২.
এত মনের খবর রাখতে গেলে
নিজের মনের খবর কীভাবে রাখি
২৩৩.
চাইতে গিয়ে পেলাম না
সেই বেদনার চেয়ে
দিতে গিয়ে দিতে পারলাম না
সেই বেদনা অনেক বড়ো
২৩৪.
খোদা তোমাকে
একা পেতে চাই না
তাহলে আমি কাকে নিয়ে
স্বর্গ গড়বো
২৩৫.
আমি মৃত্যুর চেয়ে
অসম্মানিত হওয়াকে
বেশি ভয় করি
২৩৬.
সময়ের শেষ নেই
শেষ আছে
আর সবকিছুর
২৩৭.
আমি জীবন সম্পর্কে
আশাবাদী
শত নিরাশায়ও
জীবনের প্রতিজ্ঞা যদি
নাই থাকবে
তবে জন্মেছিলাম কেন
২৩৮.
আমি কবরে বাতি চাই না
জীবনে বাতি চাই
মৃত্যু আমার কাছে
অসীমের পথে
অনাদি জীবনের আলিঙ্গন
জীবন আমার কাছে
মৃত্যুর পদধ্বনি
মৃত্যু জীবনের
২৩৯.
আনন্দের জন্যই যদি
নেশা না হয়
নেশা করা কেন
যে নেশায় আনন্দ নেই
যে নেশায় মনের আদান-প্রদান নেই
সেই নেশা হারাম
২৪০.
পৃথিবীটাকে যেভাবে
চেয়েছিলাম
সেভাবে পেলাম না
যেভাবে পেলাম
তা-ও ধরে রাখতে পারলাম না
২৪১.
তোমার ধ্যানেই
রাতের পর রাত
জেগে থাকি
নিজের ধ্যানে নয়
আমি তো আজ আছি
কাল নেই
২৪২.
আশায়-আশায়
নেশায়-নেশায়
জীবন কেটে যায়
তবু আশা পূর্ণ হয় না
তাই নেশাও কাটে না
২৪৩.
মানুষ আমার সাথী
কিন্তু স্রষ্টা আমার সঙ্গী
২৪৪.
আমি বড়ো চিন্তা করতে গিয়ে
ছোট চিন্তা ভুলে যাই
সেই সুযোগে লোকেরা আমাকে ঠকায়
তার চেয়েও বেদনাদায়ক
তারা আমাকে বোকা ভাবে
তাদের বিচারে
আমি বুদ্ধিমান নই
এই আমার গর্ব
২৪৫.
কাউকে ভালোবাসতে গেলে
এখন ভয় করে
ভালোবাসার দায়িত্ব কি
আমি আর নিতে পারবো
২৪৬.
জীবনের যত কথা
যত ব্যথা
যতো গাঁথা
যত গান যত প্রাণ
সবই কি হবে
নি®প্রভ ও নি®প্রাণ
আশার আলো কি
উদ্ভাসিত করবে না
আমার মনের ধ্যান
২৪৭.
শত ক্রন্দনের বিনিময়ে
আমি একটা
হাসি দেখতে চাই
২৪৮.
একদিন আরেকদিন
কিন্তু সবদিন
একদিন নয়
২৪৯.
মানুষ আদর ভুলে এখন
মুনাফার অঙ্ক নিয়ে ব্যস্ত
অন্তরঙ্গতা ভুলে
কপটতায় বিশ্বাসী
সরলতা এখন বোকামি
কুটিলতা রাজনীতি
২৫০.
আমরা এক লক্ষ্যহীন আবর্তে
ঘুরপাক খাচ্ছি তো খাচ্ছি
ভুলে যাচ্ছি সুন্দরের দুনিয়া
আমরা এখন
ঝাঁজরা হৃদ্পিন্ড ও বিকৃত অস্তিত্বের
দিশেহারা মানুষ
তিলে-তিলে জ্বলছি
আমাদেরই তৈরী নরকের জ্বালায়
২৫১.
ভুখা মানুষের ভিড়ে
সিঁড়ি বেয়ে সাফল্যের পিরামিড
যদি গড়েই তুলি
সেই পিরামিড থেকে কি
নেমে জিরোবার
পাবো সময়
না পিরামিডের সোপান বেয়ে
উঠতে গিয়ে
হার্টের রোগে
মারা যাবো
ওরা হার্টের রোগে
মরে না
মরে অনাহারে
যার সরকারী নাম
পুষ্টিহীনতা
হিসাবে দেখা যাবে
দুপক্ষই আকালে মরেছে
কেউ অনাহারে
কেউ স্ট্রোক হয়ে
২৫২.
বেঁচে থাকার যৌক্তিকতা
জন্ম নিয়েছি বলে
কিন্তু জন্ম নেয়ার
যৌক্তিকতা কি
কার বাণী
কার গান
কন্ঠে নিয়ে
আমরা জন্মেছি
না কোনও বাণী
কোনও গানই নেই
আমাদের জীবনে
২৫৩.
আমার প্রেম
অজানাকে জানতে চাওয়া
অসীমেেক আলিঙ্গন করা
আমার প্রেম
অনন্তের আরাধনা
২৫৪.
মানুষ সৌন্দর্য্য – সচেতন না হয়ে
হয়েছে ঈর্ষাপরায়ণ
আতœকাতর এই জীব
এই সুন্দর ভুবনে
কেন এত অসুন্দর
মানুষের লোভ ও ঈর্ষার কারণে
২৫৫.
মুক্তি সেদিনই আসবে
যেদিন আমরা
মোহমুক্ত হবো
২৫৬.
মানুষকে নিয়ে ভাবি
মানুষকে ভালবাসি বলে
যত ভাবি ততই দুর্ভাবনা
মনে উঁকি দেয়
মানব ভবিষ্যৎ নিয়ে
যত মিশি ততই
আস্থা হারাই
মানুষের উপর
যতই আপন করে
নিতে চাই
কেন জানি তারা
দূরে সরে যায়
ধরা দেয় না
মনের কাছে
হৃদয়হীন আমাদের
দৌড়ের প্রতিযোগীতায়
যে এগিয়ে
সেও ক্লান্ত
ঘামে সিক্ত
দৌড় তবু থামবার নয়
২৫৭.
যাকে ভালবাসি
তাকে কেন ভয় করবো
যাকে ভয় করি
তাকে কি করে ভালবাসি
ভালবাসা যদি অপরাধ হয়
আমি সেই অপরাধে অপরাধী
অন্যথায় নয়
তবে কেন হবে ভয়
আমার মনে তোমাকে নিয়ে
২৫৮.
তুমি আমার ঠিকানা
আদি ও অন্তে
তুমি আমার ঠিকানা
সুখে ও দুঃখে
তুমি আমার ঠিকানা
হাসি ও কান্নায়
তুমি আমার ঠিকানা
জীবনে ও মরনে
তুমি না হলে
আমি নিঃস্ব
আমি নিঃসঙ্গ
আমি রিক্ত
তুমি আছো বলেই
আমি আছি
জীবনে ও মরণে
২৫৯.
কত কথা ছিলো মনে
বলা হলো না
কত গান ছিলো মনে
গাওয়া হলো না
কত আশা ছিল মনে
পূরণ হলো না
কত ব্যাথা ছিলো মনে
ব্যক্ত করা হলো না
সব কথা সব গান
সব আশা সব ব্যাথা
থাক জমা তোমার চরণে
এখন আমি শান্তিতে ঘুম যাই
তোমার স্মরণে
২৬০.
মানব প্রেমের মধ্যেই তো লুকিয়ে আছে স্রষ্টার প্রেম
মানুষ ভুলে স্রষ্টাকে
পাওয়া যাবে না
স্রষ্টা ভুলে জীবনও
সুন্দর হবে না
এই দুইয়ের মিল হলেই
হবে জান্নাত
২৬১.
সব মানুষের সব দুঃখ
যদি আমি ঘুচাতে পারতাম
আমি হতাম সবচেয়ে সুখী
আল্লাহই যেখানে পারেননি
মানুষের দুঃখ ঘুচাতে
মানুষে মানুষে দ্বন্দ্বের কারণে
আমি মানুষ হয়ে
কি করে আশা করি
মানুষের দুঃখ ঘুচাবো
এই অস্থির পৃথিবীতে
স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়বো কিভাবে
এই অশান্ত জীবনে
শান্তির আশা করি কি করে
এই অন্যায়ের সমাজে
ন্যায় বিচার প্রত্যাশা কি করা যায়
বিবেক কেনা বেঁচা করে
যা দাঁড়ালো
সে এক ভয়াবহ সমাজ
সংশয়ের সমাজ
সন্দেহের সমাজ
সংহারের সমাজ
সংঘর্ষের সমাজ
যে সমাজে আমাদের বাস
২৬২.
যেখানেই যাই না কেন
বার বার ফিরে আসি
তোমার কাছে
তোমার আশ্রয়ে
কিন্তু কে সে তুমি
তা জানা হলো না
তাই বলে তুিম
রাগ করো না
২৬৩.
তোমার অথৈ প্রেমের সাগরে
আমি শুধু এক ভাসমান তরী
আমার দ্বারা কি
জানা সম্ভব
তোমার গভীরতায়
কোথায় কি
আছে জমা
২৬৪.
আমার মন পাখী যেখানে যার কাছে
উড়ে যেতে চায় সেখানে হবে কি ঠাঁই
আমার জন্যে
২৬৫.
জীবনের বন্ধনে আবদ্ধ মন
কি হতে পারে শৃঙ্খল মুক্ত
যদি না থাকে আগামীর ইঙ্গিত
না থাকে অতীতের ছায়া
জীবনের যাত্রা পথে
২৬৬.
চলার পথে যদি
এতো চোরাবালি থাকে
পথ হাঁটি কি করে
২৬৭.
তোমার দেহের পবিত্র স্রোতধারায়
আমি সন্তরণ করি
এর ছন্দে আমি ছন্দিত
শিহরনে শিহরিত
পুলকে পুলকিত
তোমার দেহের ক্ষণিক আস্বাদ
এনে দেয় অবিনশ্বর জীবনের স্বাদ
আমরা যেন একই সুরের বন্ধনে আবদ্ধ
মুক্ত পাখী আকাশে ডানা মেলেছি
আকাশটাকে ধরবো বলে
আকুল আলিঙ্গনে
২৬৮.
আমরা চলেছি কোন পথে
প্রাচুর্য্যরে এক শিখর থেকে
আরেক শিখরে
আবার অভাবের খাদ থেকে গভীরতর খাদে
অভাব শুধু ভাত কাপড় ও বাসস্থানের নয়
অভাব আবেগ ও অনুভূতির
অভাব বিশ্বাসের
২৬৯.
শুধু আইন করে কি
পূরন হবে মনের শূন্যতা
তৃপ্ত হবে আতœা
আতœাহীন পৃথিবী কি
হবে না হাহুতাশে ভরা
জীবন হবে না দুর্বিষহ
২৭০.
আমরা এখন পণ্যের
বাজারে মশগুল
মনের অঙ্গনের খবর কে রাখে
পন্যের বাজারে প্রসার
কি পারবে জীবনের
বিকাশ ঘটাতে
শান্তির পথে
সুন্দরের পথে
সহ-অবস্থান
সহ-মর্ম্মিতার পথে
জীবনকে এগিয়ে নিতে
২৭১.
হে অন্যন্য হে অসীম
হে শাশ্বত হে অনন্ত
হে অবিনশ্বর
হে ধারক হে প্রতিপালক
হে ন্যায়বিচারক
হে সত্য হে সুন্দর
হে মহান হে সর্বগুণী
সর্বজ্ঞানী সর্বশক্তিমান
সর্বশ্রেষ্ঠ
সৃষ্টি ও ধ্বংশের সর্বময় কর্ত্তা
হে আমাদের স্্রষ্টা
হে দয়াল হে করুণাময়
তোকে জানাই আমার অন্তরের
অন্তস্থল থেকে অফুরন্ত
প্রেম ভালবাসা শ্রদ্ধা ও ভয়
তবে তোর ভয়ে যতো না ভীত আমি
তার চেয়ে বেশী ভীত মানুষের ভয়ে
২৭২.
আমার প্রেমের ভাব বুঝি
কিন্তু ভাষা জানি না
আমার মনে সুর আছে
কিন্তু স্বরলিপি নেই জানা
২৭৩.
স্বপ্ন বার বার দেখেছি
বার বার ভেঙ্গে গেছে
স্বপ্ন তাই আর দেখি না
২৭৪.
সে আমাকে পরিত্যাগ করে
কি করে
শাস্তি দেয়ার জন্য হলেও
আমাকে তার প্রয়োজন
আর ভালবাসার জন্য
আমার প্রয়োজন তাকে
২৭৫.
তোমার দেহ আমাকে আকর্ষণ করে
যেমন বোদ্ধাকে করে ভাস্কর্ষ
এই পবিত্র সরোবরে
আমি অবগাহন করি
সৌন্দর্য্য পিয়াসী ও
ভাববিলাসী বলে
যে ভাস্কর রূপ দিয়েছে এই দেহকে
তার স্বরণে
ভালবাসি আমি এই জগৎটাকে
২৭৬.
আমরা প্রাচুর্য্যরে পিরামিড
তৈরীতে ব্যস্ত
উঁচু থেকে উঁচুতে
কিন্তু ভীত যে ধসে পড়ছে
সে খেয়াল নেই
২৭৭.
আমরা মনের বিকাশ চাই
আতœার শান্তি চাই
সবাই মিলে খেয়ে-পরে
সুখের সমাজ গড়তে চাই
আতœা ও সত্তাকে
পণ্যের বাজারে
বিসর্জন দিয়ে
কী আমরা রেখে যাবো
আগামী প্রজন্মের জন্যে
সেই জিজ্ঞাসা নেই কেন
আমাদের কবিতায় কথায় ও গানে
বক্তব্য-বিবৃতিতে
আমাদের মনের চোখে কি
ছানি পড়েছে
না আমরা ভবিষ্যতকে
জলাঞ্জলি দিচ্ছি
বর্তমানের লালসায়
আমার দেহ-মন
আমি বাঁচিয়ে রাখতে চাই
যান্ত্রিকতার দৌরাতœ্য থেকে
বাঁচিয়ে রাখতে চাই
অর্থ-পিশাচদের আঁচড় থেকে
আতœার শান্তি চাই
মনের মুক্তি চাই
বাঁচার মতো বাঁচতে চাই
এই দেশে
বাংলাদেশ আমার স্বাধীনতা
শান্তি ও মুক্তির সিংহদুয়ার
এই স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করে
এই অভিযাত্রায় বাধা দেয়
সাধ্য কার
বারো কোটি লোক জীবিত থাকতে
Leave a Reply